ইউক্রেন-রুশ যুদ্ধকে ইস্যু করে সবার সামনে যে বিষয়টি বার বার উঠে আসছে তা হচ্ছে কোন দেশের হাতে সবচেয়ে বেশি পারমাণবিক অস্ত্র। রাশিয়ার হাতে এই মরণাস্ত্রটি বেশি থাকা স্বত্ত্বেও সমর শক্তিতে সেরা যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি বিশ্বে অস্ত্র রপ্তানিতে শীর্ষ দেশ যুক্তরাষ্ট্র। তাহলে কি বলা যায়, দেশটির সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে অস্ত্র?
পশ্চিমা শিল্পোন্নত দেশগুলোর অর্থমন্ত্রীদের উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট নিক্সন প্রশাসনের ট্রেজারি সেক্রেটারি জন কোনালি বলেছিলেন, ইটস আওয়ার কারেন্সি বাট ইটস ইওর প্রবলেম অর্থাৎ এটা আমাদের মুদ্রা, কিন্তু সমস্যাটা তোমাদের। মূলত তখন থেকেই বাণিজ্যের প্রতিযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় অস্ত্রের নাম ডলার।
সেই সত্তরের দশকের মতোই বর্তমানে যখন প্রায় পুরো বিশ্বই অর্থনৈতিক সংকটে, তখন ডলারের একচেটিয়া আধিপত্য যুক্তরাষ্ট্রকে ফের সুযোগ করে দিয়েছে এই অস্ত্র প্রয়োগের। আর এই অস্ত্র প্রয়োগে বিপদে পড়েছে বাকি বিশ্ব। দেশে দেশে কমে যাচ্ছে মুদ্রার মান। তবে ব্যতিক্রম শুধু যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলার।
যে কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় শক্তি ডলার
বিশ্বে ডলার সব থেকে বেশি ছাপানো মুদ্রার মধ্যে একটি। তাই ডলার যেকোনো কিছুর পরিপ্রেক্ষিতে অন্যতম নির্ভরযোগ্য সম্পদ। যেকোনো মুদ্রা, সোনা বা শেয়ারের মূল্য বৃদ্ধি কিংবা হ্রাস হওয়ার তুলনায় ডলারের মান অনেকটাই স্থিতিশীল। থিবীর প্রায় সব মানুষই ডলার কেনাবেচা করতে পারেন এবং আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের মাধ্যমেই লেনদেন সম্পাদিত হয়। এ কারণে ডলারের আধিপত্য অন্য যেকোনো মুদ্রার চেয়ে বেশি।
চীন আর ইউরোপের অর্থনৈতিক ধাক্কার প্রভাব পড়ে বিশ্বের অন্য দেশগুলোর ওপরও। কিন্তু এই অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যেও একমাত্র ভালো আছে যুক্তরাষ্ট্র। ইউক্রেন যুদ্ধ তাদের কোনো সমস্যায় ফেলেনি; বরং আশীর্বাদ বয়ে এসেছে তাদের অস্ত্র বাণিজ্য ও জ্বালানি খাতের জন্য। সম্প্রতি দফায় দফায় সুদের হার বাড়ায় ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক, যা গত তিন দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। ফেডারেল রিজার্ভের এই সুদের হার বাড়ানোর সিদ্ধান্তেই রাতারাতি চাঙা হয় ডলার।
আর্থিক সংকটকালেও ডলার কেন স্থিতিশীল?
ইউরোপ, চীন ও রাশিয়ার অর্থনীতির টালমটাল অবস্থার মুহূর্তে বিশ্বে একমাত্র স্থিতিশীল যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি। তার ওপর সুদের হার বাড়িয়ে দেয়ায় যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ এখন লাভজনক। ফলে বিশ্বের বড় পুজিঁপতিদের সামনে বিনিয়োগের লাভজনক মাধ্যম এখন ডলার এবং বিনিয়োগ গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র।
দেশটির মধ্যে সারা বিশ্ব থেকে ডলার ঢুকছে হুহু করে। বিনিয়োগ বাড়ছে মার্কিন শেয়ার ও বন্ডে। এমনকি সবচেয়ে নিরাপদ স্বর্ণ কিংবা মার্কিন ডলারে বিনিয়োগ করা। কিন্তু বিশ্বে স্বর্ণের যোগান সীমিত, পাশাপাশি স্বর্ণের লেনদেনও কিছুটা ঝক্কির। তাই মার্কিন ডলারের দিকে ঝুঁকছেন বিনিয়োগকারীরা।
মন্দা স্বত্ত্বেও চাঙ্গা ডলার
গত ২০ বছরের মধ্যে ডলারের মান এখনই সবচেয়ে বেশি। দি ইউএস ডলার ইনডেক্স অনুযায়ী, ডলারের বিপরীতে জাপানি ইয়েনের মান কমেছে ১১ দশমিক ৭ শতাংশ, ব্রিটিশ পাউন্ড ও ইউরোর দাম কমেছে সাড়ে ৭ শতাংশ হারে, সুইস ফ্রাঁর মান কমেছে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ আর চীনের মুদ্রা ইউয়ানের অবমূল্যায়ন ঘটেছে সাড়ে ৩ শতাংশ। পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।